 |
মসজিদ মার্কেটের এই দোকানে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। |
গাজীপুরের ব্যস্ততম বানিজ্যিক এলাকা চান্দনা চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেটে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার তিন দিন পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করেছে। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। তবে পুরো এলাকা এখনো আতঙ্কের ছায়ায় ঢাকা।বিশেষ করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও উৎকণ্ঠা গভীরভাবে রয়ে গেছে। ঘটনার সময়কার ভিডিও ফুটেজ ধারণ করার কারণে হত্যার শিকার হন স্থানীয় দৈনিক প্রতিদিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিন।
রোববার (১০ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদ মার্কেটের বেশ কিছু দোকান খুললেও ঘটনাস্থলের দোকানটি এখনো তালাবদ্ধ। র্যাব, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর টহল থাকলেও স্থানীয়দের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
 |
মসজিদ মার্কেটের এই দোকানে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। |
চান্দনা চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘যে মার্কেটে একজন সাংবাদিককে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো, সেখানে আমরা কীভাবে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করব? ক্রেতারাও ভয় পাচ্ছেন, সন্ধ্যার পর মার্কেট ফাঁকা হয়ে যায়।’
একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রোকসানা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার দিন ছুটির পর বাসায় ফিরছিলাম। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাই। এখন প্রতিদিন বাসায় ফেরার সময় আতঙ্ক কাজ করে।’
আরেক পোশাক শ্রমিক সেলিম মিয়া জানান, ‘আমরা রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত কাজ করি। এখন মনে হয়, কখন কী ঘটে যায় বলা যায় না। নিরাপত্তা না বাড়ালে এই ভয় দূর হবে না।’
 |
গাজীপুরের ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেট। |
গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সাংবাদিক তুহিনকে মসজিদ মার্কেটের ভেতর কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন শুক্রবার সকালে নিহতের বড় ভাই সেলিম বাদী হয়ে বাসন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যেখানে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফিরছিলেন। ‘গোলাপী’ নামে এক নারী তাকে ‘হানিট্র্যাপে’ ফেলতে গেলে তিনি বাধা দেন। তখন আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে আহত করে। ওই ব্যক্তি পালানোর সময় ঘটনাটি ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। ভিডিও ডিলিট করতে বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান, পরে দুর্বৃত্তরা তাকেই কুপিয়ে হত্যা করে।
এদিকে, গাজীপুর সেনাবাহিনী ক্যাম্প সূত্র জানিয়েছে, নগরীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা সর্বদা সতর্ক ও প্রস্তুত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে টহল জোরদার করা হয়েছে। অপরাধ দমনে আর্মি ক্যাম্প আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত টহল অভিযান চালানী হচ্ছে। নগরবাসীর নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার, এবং আমরা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অপরাধীদের দমন নিশ্চিত করব।